মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন
আমতলী প্রতিনিধি॥ বরগুনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফোরকান আহম্মেদ খানের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে গায়েরি লোহার সেতু দেখিয়ে পুনরায় সংস্কারের প্রাক্কলন তৈরির অভিযোগ উঠেছে।
খাল নেই, ব্রিজও নেই, রয়েছে বাঁশের সাকো। আমতলীর ওই বাঁশের সাঁকোকে আয়রন ব্রিজ দেখিয়ে পুনরায় সংস্কারের প্রাক্কলন তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
ওই দরপত্র বাতিল করে সরেজমিনে সার্ভে করে পুনরায় প্রাক্কলন তৈরির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ সব গায়েরি ব্রিজের খবরে এলাকার মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তারা এমন অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন।
জানা যায়, বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ২০২০-২১ অর্থবছরে আইবিআরপি প্রকল্পের আওতায় ওটিএম পদ্ধতিতে ২৮ জুলাই ৮টি প্যাকেজে ৩৩টি আয়রন ব্রিজের পুনরায় সংস্কারের দরপত্র আহ্বান করে।
যার প্রাক্কলন ব্যয় দরপত্রে উল্লেখ নেই। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর ওই দরপত্রে অংশগ্রহণের শেষ দিন। ওই দরপত্র নোটিশ প্রকাশিত হওয়ার পর বেরিয়ে আসে অনিয়মের তথ্য।
৩৩টি ব্রিজের মধ্যে ২৫টি আমতলী উপজেলার হলদিয়া, গুলিশাখালী ও আমতলী সদর ইউনিয়নে ও আটটি ব্রিজ তালতলী উপজেলায়। ওই দরপত্রের নোটিশে উল্লেখ আছে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া খালের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে আয়রন ব্রিজ।
অপর দিকে একই স্কুলের সামনে একই ব্রিজ নাশবুনিয়া খালে দেখানো হয়েছে। দৃশ্যত নাশবুনিয়া নামে কোনো খাল নেই। দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের বৃদ্ধ সুশান্ত হাওলাদার ও আবদুল গণি গাজী বলেন, নাশবুনিয়া নামে হলদিয়া ইউনিয়নে কোনো খাল আছে তা জানা নেই।
একই ইউনিয়নের তুজির বাজার ও রামজির বাজার নামক স্থানে দুটি ব্রিজ পুনরায় সংস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে ওই নোটিশে। কিন্তু তুজির বাজার ও রামজির বাজারের সামনের হলদিয়া খালে কোনো ব্রিজ নেই। ওই দুই বাজারের খালে রয়েছে বাঁশের সাঁকো।
এলাহিয়া দাখিল মাদ্রাসার সামনে ও দক্ষিণ রাওঘা কেরাতুল কোরান মাদ্রাসার সামনে ব্রিজ পুনরায় সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ওই দুই মাদ্রাসার সামনের খালে ব্রিজ নেই। ওখানেও রয়েছে বাঁশের সাঁকো। জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হলদিয়া ইউনিয়নে ছয়টি ব্রিজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার একটি ব্রিজ নির্মাণ করে বাকি পাঁচটি ব্রিজ নির্মাণ না করে এলজিইডি কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কাগজকলমে নির্মাণ দেখিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমানে ওই ছয়টি ব্রিজের নামে পুনরায় সংস্কার দেখিয়ে দরপত্র আহ্বান করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
অভিযোগ রয়েছে, বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) ফোরকান আহম্মেদ খান মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ওই ৩৩টি ব্রিজ এলাকা সরেজমিন সার্ভে না করেই পুনরায় সংস্কারের প্রাক্কলন তৈরি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এছাড়া ওই ৩৩টি ব্রিজের পুনরায় সংস্কারের প্রাক্কলন তৈরিতে রয়েছে নানাবিধ অনিয়ম।
সাধারণ ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য প্রচলিত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান না করে ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করেছেন বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী। ওটিএম পদ্ধতিতে এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, এতে সাধারণ ঠিকাদারদের দরপত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তারা। তারা আরও অভিযোগ করেন, দরপত্রের নোটিশে প্রাক্কলন ব্যয় উল্লেখ নেই।
ওই প্রাক্কলনের ব্যয় একমাত্র নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই জানেন। বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহম্মদ খানের এমন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ ঠিকাদাররা। তারা ওই সব গায়েরি ব্রিজ পুনরায় সংস্কারের দরপত্র বাতিল ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
আমতলী ঠিকাদার সমিতির সভাপতি জিএম ওসমানী হাসান বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমতলী উপজেলায় অন্তত ৫৫টি আয়রন ব্রিজের দরপত্র হয়েছিল। ওই ব্রিজগুলোর মধ্যে কিছু ব্রিজ নির্মাণ না করেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এখন আবার ওই ব্রিজগুলোই পুনরায় সংস্কার দেখিয়ে প্রাক্কলন তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফোরকান আহম্মেদ খান বলেন, এ ব্রিজগুলো পুনরায় সংস্কারের প্রাক্কলন আমি তৈরি করিনি। এর দায়ভার আমার নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রজেক্ট পরিচালকের নির্দেশে এ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
Leave a Reply